প্রাসঙ্গিকতা যখন প্রাসঙ্গিক

এক বিকেলে হন্তদন্ত হয়ে কথা সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ীতে তাঁর এক বন্ধু এসে উপস্থিত। বন্ধুকে স্বাগত জানিয়ে লেখক হঠাৎ আগমনের কারন জানার অপেক্ষায় রইলেন। ঘরে ঢুকেই বন্ধুটি বললেন, শীঘ্র কাপড় পাল্টে তৈরী হয়ে নাও, এক্ষুণি বেরুতে হবে। লখনউ থেকে সুবিখ্যাত ওস্তাদ-গায়ক এসেছেন, সাথে আছেন খ্যাতিমান বাজিয়েরা। ওস্তাদজি শুধুই মালকোষ গাইবেন। আর ওই রাগটি তো তোমার প্রিয়। বহু কষ্টেশিষ্টে দুখানা মাত্র টিকিট জোগাড় করেছি। উঠে পড়ো তো তাড়াতাড়ি, বেরিয়ে পড়ি। শরৎবাবু ধুতির কোঁচা ঠিক করতে করতে বললেন, দেখ তোমার ওস্তাদজি যে গাইবেন ভালই সেটা বেশ বুঝতে পারছি; কিন্তু তিনি উপযুক্ত সময়ে থামতে জানেন তো?

এই “থামতে জানাটাই” হলো ক্ল্যাসিক! কতটুকু বলতে হবে, কখন বা কোথায় কি কথা বলা চলবে না, -এ বিষয়গুলোর সীমানা বোঝার সক্ষমতাই “মাত্রাজ্ঞান”। এমনতর জ্ঞানের অভাব কোন উৎকৃষ্ট বিষয়কেও নিকৃষ্ট করে তুলতে পারে। অবান্তর বা অপ্রাসঙ্গিক কথা বলাটা বক্তার জন্য অমর্যাদাকর। শ্রোতার জন্য তা হয়ে উঠে বিরক্তিকর। আর এ কথা তো মানতেই হবে যে, বিরক্তি থেকে আসে অশ্রদ্ধা, অশ্রদ্ধা থেকে ক্ষোভ; আর সেই ক্ষোভ থেকেই জন্ম হয় বিক্ষোভের। আজকাল “প্রাসঙ্গিকতা” আমাদের সমাজে একেবারে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। তবে কি জানেন, আমজনতা অপ্রাসঙ্গিক হলে সমাজের তেমন কিছু ক্ষতিবৃদ্ধি হয় না। কিন্তু মহাজনেরা বা জনপতিরা প্রসঙ্গের বাইরে গেলে সমাজ ঘোর অমানিশায় পতিত হয়।

আজ তবে করোনা নিয়ে সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া দুএকটি ঘটনার “প্রাসঙ্গিকতা” সম্পর্কে বলি। এই মহামারীকালে বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এবং সরকারের “অপ্রাসঙ্গিক” আচরণে আমরা তো শরমে মরি! এর কোনটা রেখে কোনটা যে বলি, তা নিয়েও দোটানা! আগে তবে বেসরকারিগুলোর একটাই বলি,-

গণস্বাস্থ্য’ নামের একটি বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠান মানুষের শরীরে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি নির্ণয়ের একটি যন্ত্র উদ্ভাবন করেছে। এ উদ্ভাবন সঠিক না বেঠিক তা এখনও প্রমাণিত নয়। এমন অবস্থায় নিয়ম হল গণস্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ চিকিৎসা বিজ্ঞানে উপযুক্ত জ্ঞানসম্পন্ন তৃতীয় কোন নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে যন্ত্রটির কার্যকারিতা নিরীক্ষা করাবে এবং এর বানিজ্যিক উৎপাদনের জন্য দেশের সরকারের কাছে আবেদন করবে। উদ্ভাবিত কোন নতুন ঔষধ বা চিকিৎসা সরঞ্জামাদি বাজারাত করণের এটাই বিশ্বজনীন রীতি। আর অনুমোদন চাইবার এই প্রক্রিয়াটি শতভাগ দাপ্তরিক, আনুষ্ঠানিক নয় মোটেই।

বিষয়টি নিয়ে আমাদের গণস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানটির গণসংযোগের ধরনটি অতি বিরক্তিকর। এই মহামারী পরিস্থিতির মধ্যেও কথিত চিকিৎসা যন্ত্রটি সরকারের কাছে হস্তান্তরের জন্য গণস্বাস্থ্য তাদের নিজস্ব মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠানটিতে সরকারের মন্ত্রী, স্বাস্থ্য বিভাগের উর্দ্ধতন কর্তাবৃন্দ, কয়েকটি রাষ্ট্রের রাষ্ট্রদুতদের, জাতিসঙ্ঘের প্রতিনিধি, সংবাদকর্মী, প্রমুখদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কাজটি যেখানে মানব সেবার ব্রত নিয়ে নিভৃতে করার কথা, সেখানে এমন ঢাকঢোল পিটাবার সুযোগ কোথায়? আর এমনটা যারা করেন তারা আসলে কোন শ্রেণীভুক্ত?

বলি “হস্তান্তর অনুষ্ঠান” কেন হবে? এ তো সরকারের দপ্তরে গিয়ে আবেদন করার বিষয়! যন্ত্রটির নমুনা এবং এর কার্যকারিতার সপক্ষে প্রয়োজনীয় প্রমাণনথি সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা দিয়ে বানিজ্যিক উৎপাদনের জন্য আবেদন করারই তো দরকার ছিলো! একটি করণীক প্রক্রিয়াকে আনুষ্ঠানিক করে তোলার উদ্দেশ্য কি? আমরা কি তবে চিকিৎসা সেবার মাঝেও গলাবাজি চালিয়ে যাবো? এমন আড়ম্বরতো প্রাসঙ্গিক নয়! ভেবেছিলাম গণস্বাস্থ্যের এই ভাল কাজটির জন্য আমরা আনন্দ-ঢোল বাজাবো। কিন্তু সে উপায় আর রইলো কই? উল্টাপাল্টা বাজিয়ে ঢোলটি তো ওরা নিজেরাই ফাটিয়ে বসে আছে।

এবার তবে সরকার পক্ষের অপ্রাসঙ্গিক কাজের নমুনা বলি। বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় দেশের সকল জেলা শাসকদের কাছে একটি নির্দেশনা পাঠিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে যে, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশের অসহায় মানুষদের মানবিক সহায়তা হিসেবে দেওয়া ত্রাণ সামগ্রী ও শিশুখাদ্যের প্যাকেট বা বস্তার গায়ে “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার” কথাটুকু লিখে বিতরণ করতে হবে। (সূত্রঃ বাংলাদেশের অন্যতম জাতীয় দৈনিক সমকাল -এর ১২ই এপ্রিল, ২০২০ প্রতিবেদন)

ত্রাণের প্যাকেটে এমনটা কেন লেখা হবে? এই সব দান সামগ্রী তো প্রধানমন্ত্রী তাঁর ব্যক্তিগত তহবিল থেকে দিচ্ছেন না! সরকারী ভান্ডার তো জনতার গচ্ছিত সম্পদ। সরকার সে সম্পদের জিম্মাদার বটে, কিন্তু মালিক তো নয়। কর্তৃপক্ষ কি ভুলে গেলেন যে, জনগণের সম্পত্তি দেশের বিপন্ন মানুষদের দিয়ে সেটাকে “সরকার প্রধানের নামাঙ্কিত উপহার” বলাটা অতি অশোভন। উপহার কেবলমাত্র নিজস্ব সম্পদ থেকেই দেওয়া যেতে পারে। অবাধ তথ্য প্রবাহের কল্যাণে আজ আমরা দেখছি যে, বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধানরা এই করোনা মহামারী মোকাবিলায় তাঁদের নাগরিকদের জন্য রাষ্ট্রীয় কোষাগার উন্মুক্ত করেছেন। কিন্তু তা যে তাদের দেশের “প্রধানমন্ত্রীর উপহার”, এমনটা তো কাউকে বলতে দেখছি না! মানুষের পদ, পদবী, শিক্ষা, দীক্ষা, ইত্যাদি তাঁকে বিবেকবান করে তুলবে, এ তো কোন বড় চাওয়া নয়।

 

একটু আগেই বলছিলাম যে, জনপতিরা “অপ্রাসঙ্গিক” হলে সমাজ অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। কি জানেন সে আমলে আমাদের গাঁয়ে একটা প্রবাদ চালু ছিলো, “আগের হাল যেদিক যায়, পিছের হাল সেদিকই ধায়”। প্রধানমন্ত্রীর নাম যখন ত্রাণের বস্তায় লেখা হচ্ছে, তখন বাদবাকি মন্ত্রী এমপিরাও জোরেসোরে সেই পদাঙ্ক অনুসরণ করছেন। টেলিভিশনে, স্যোশাল মিডিয়ায়, খবরের কাগজে, সর্বত্র এই ত্রাণ বিতরণকারী মন্ত্রী, এমপিদের ছবি। পাঁচ কেজি চালের প্যাকেট একজন দানগ্রহীতার হাতে ধরিয়ে এ সব নেতা উপনেতারা সারিবদ্ধ হয়ে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে পোজ দিচ্ছে! নিরন্ন মানুষের অনাহারকে পুঁজি করে কুরুচিকর এই “ক্যামেরার পোজ” দেখে আমরা লজ্জিত!

শৈশবে দাদী শিখিয়েছিলেন, ডান হাতে দান করলে বাম হাতখানা যেন সে দানের খবরটি না জানে। আজ কি তবে সমাজ থেকে সে সব শিক্ষা উবে গেল? সরকারী সম্পদের বিতরণকারী নিজেকে “উপহারদানকারী” হিসেবে প্রচার করছেন কোন বিবেচনায়? আবার যাঁরা ব্যক্তিগত তহবিল নিয়ে এগিয়ে আসছেন তাঁরাও “আমি দান করেছি” এমনটা প্রচারেই অধিক ব্যস্ত। মানব সভ্যতা যখন বিপন্ন তখনও কি আমাদের আত্মপ্রচারের লিপ্সা যাবে না? যেন চারিদিকে শুধুই “আমি আর আমি,” অন্যেরা সব নিষ্ক্রান্ত!

আমি তো এমনটাই ভাবতে চাই যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রাসঙ্গিকতা বোঝেন। এক শ্রেণীর অতি উৎসাহী দলীয় নেতা এবং আমলারা তাঁকে খুশি রাখবার জন্য দানের বস্তায় তাঁর নামাঙ্কণ করছেন। কিন্তু পারিপার্শ্বিক ঘটনাবলী আমার সে ভাবনাকে নিরাশ করছে। পাঠক বন্ধুদের আরো একটি ঘটনা বলে এ লেখা শেষ করবো। দেশের করোনা পরিস্থিতি তদারকীর অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী তাঁর দপ্তর থেকে বিভিন্ন জেলার সরকারী কর্তাবৃন্দ এবং জনপ্রতিনিধিদের সাথে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মাঝেমধ্যেই কথা বলে থাকেন। একটি জেলার এমন ভিডিওকথনের ক্লিপ দেখবার সুযোগ হয়েছে আমার।

ঢাকাস্থ কার্যালয় থেকে প্রধানমন্ত্রী কথা বলছিলেন। অপরদিকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সরকারের সকল শাখার জেলা প্রধানগণ এবং সরকার দলীয় স্থানীয় দুএকজন নেতা। ওই ভিডিওকথায় যুক্ত ব্যক্তিসকলের কাছে প্রধানমন্ত্রীর জিজ্ঞাসা ছিলো, “আপনাদের এলাকার সর্বশেষ করোনা পরিস্থিতি কি?” -এরই জবাব বলছিলেন বক্তারা। জেলা প্রশাসক বললেন ব্যবস্থাপনার দিক, সিভিল সার্জন স্বাস্থসেবার প্রস্তুতির কথা, জেলা আওয়ামী লীগের নেতা জানালেন দূর্দশাগ্রস্ত মানুষের আকুতি, পুলিশ সুপার বললেন আইনশৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ে, কৃষি অফিসার শোনালেন কৃষকের বোরো ধান ঘরে তোলার সংকট নিয়ে। ভিডিওকথন বেশ আগাচ্ছিলো। আমি খুব বিস্ময়ের সাথে বক্তাদের বক্তব্যের সূচনা অংশটি লক্ষ্য করছিলাম। মোটাদাগে তা এ রকম, –

“মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে কথা বলতে সুযোগ দেওয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। প্রথমেই স্মরণ করছি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট বাঙ্গালী, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, শ্রদ্ধা জানাই মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লক্ষ শহীদদের এবং বীরাঙ্গনা মা বোনদের, শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করছি জেলে নিহত চারজন জাতীয় নেতার প্রতি ও ২১ শে আগষ্টের গ্রেনেড হামলায় নিহতদের প্রতি, সবাইকে মুজিববর্ষের অভিনন্দন… ইত্যাদি ইত্যাদি”।

সব বক্তারা তাঁদের কথা বলার সূচনায় এই বাক্যগুলো যেন শেখানো তোতা পাখির বুলির মতো করে বলছিলো। একই সভায় বক্তা পরিবর্তনের সাথে সাথে নতুন বক্তার মুখে একই কথার পূণঃউচ্চারণ যেন শ্রবণসৌন্দর্য বিনষ্ট করছিলো। মনে হচ্ছিলো কেউই যেন অন্তর থেকে কথাগুলো বলছেন না, বলতে হবে তাই বলা। কাউকে খুশি রাখার জন্য অমন করে বলাটা আজকাল বোধকরি একটা বাধ্যবাধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আচ্ছা, প্রত্যেক বক্তাকে তোতা পাখি না সাজালেই কি নয়? যদি এমনটা করা হতো যে, আয়োজনটির সঞ্চালক সবার পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ, মুজিববর্ষ, বীরাঙ্গনা, প্রভৃতি সকলের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করছেন, -সেটাই রুচিশীল হতো না কি?

এই মহামারীরূপী করোনা ভাইরাস প্রতিরোধকল্পে আয়োজিত একটি সভার সকল বক্তার অমনতর সূচনাস্তুতি কতটা “প্রাসঙ্গিক” সেটা পাঠকরাই বিবেচনা করুন। তবে সেদিনের ভিডিও কনফারেন্সে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কিন্তু ওই বক্তাদের কাউকেই স্তুতিসম্ভাষণ থামাতে বলেননি!

(লেখক বাংলা টেলিভিশন কানাডা’র নির্বাহী)

(রচনাটি টরন্টো’র আদি সংবাদপত্র “বাংলা কাগজ” -এর জন্য লিখিত। ফেসবুক-বন্ধুরা কেউ যদি পড়তে আগ্রহী হন, সেই চিন্তা থেকে কাগজ-কর্তৃপক্ষের সম্মতিতে লেখাটি আপলোড করলাম)

 

This Post Has 194 Comments

  1. Fake Temp Mail

    I’m often to blogging and i really appreciate your content. The article has actually peaks my interest. I’m going to bookmark your web site and maintain checking for brand spanking new information.

  2. What i dont understood is in reality how youre now not really a lot more smartlyfavored than you might be now Youre very intelligent You understand therefore significantly in terms of this topic produced me personally believe it from a lot of numerous angles Its like women and men are not interested except it is one thing to accomplish with Woman gaga Your own stuffs outstanding Always care for it up

  3. helloI really like your writing so a lot share we keep up a correspondence extra approximately your post on AOL I need an expert in this house to unravel my problem May be that is you Taking a look ahead to see you

  4. alpilean

    Thank you for sharing your personal experiences and stories It takes courage to open up and you do it with such grace and authenticity

  5. ikaria juice

    Your blog is a haven of positivity and encouragement It’s a reminder to always look on the bright side and choose happiness

  6. ikaria juice

    I have been struggling with this issue for a while and your post has provided me with much-needed guidance and clarity Thank you so much

  7. Bwer Pipes: Pioneering Irrigation Excellence in Iraq: Explore Bwer Pipes for cutting-edge irrigation solutions that set the standard for excellence in Iraqi agriculture. Our advanced sprinkler technology and durable pipes deliver precise water distribution, enabling farmers to achieve optimal crop yields and sustainable farming practices. Explore Bwer Pipes

  8. ZacheryGAL

    purchase amoxicillin 500 mg: amoxil best price – buy amoxicillin 500mg canada

  9. RichardFex

    buying prescription drugs in mexico mexican pharmacy purple pharmacy mexico price list

  10. Williammoich

    mexican border pharmacies shipping to usa: mexican pharmacy – mexico drug stores pharmacies

  11. RichardFex

    purple pharmacy mexico price list northern doctors mexican mail order pharmacies

  12. Williammoich

    buying prescription drugs in mexico: mexican pharmacy – mexican pharmacy

  13. Williammoich

    mexico drug stores pharmacies: northern doctors – mexican drugstore online

  14. RichardFex

    mexican border pharmacies shipping to usa [url=https://northern-doctors.org/#]mexican pharmacy northern doctors[/url] pharmacies in mexico that ship to usa

  15. Williammoich

    best online pharmacies in mexico: mexican pharmacy – п»їbest mexican online pharmacies

  16. RonnieSoags

    mexican drugstore online [url=https://cmqpharma.online/#]mexican online pharmacies prescription drugs[/url] medicine in mexico pharmacies

  17. RonnieSoags

    medication from mexico pharmacy [url=https://cmqpharma.com/#]cmq pharma mexican pharmacy[/url] mexican mail order pharmacies

  18. RonnieSoags

    mexico pharmacies prescription drugs [url=https://cmqpharma.online/#]cmq mexican pharmacy online[/url] mexican pharmacy

  19. RonnieSoags

    medication from mexico pharmacy cmq pharma mexican border pharmacies shipping to usa

  20. RonnieSoags

    medication from mexico pharmacy [url=https://cmqpharma.online/#]cmq pharma mexican pharmacy[/url] reputable mexican pharmacies online

  21. RonnieSoags

    buying prescription drugs in mexico online [url=https://cmqpharma.online/#]mexico pharmacy[/url] mexican mail order pharmacies

  22. RonnieSoags

    mexican mail order pharmacies cmqpharma.com mexican pharmaceuticals online

  23. MichaelAdorp

    best canadian online pharmacy reviews: canadian world pharmacy – pet meds without vet prescription canada

  24. MichaelAdorp

    mexican rx online: mexican pharmacy – pharmacies in mexico that ship to usa

Leave a Reply